বর্তমানে বাংলাদেশে যেকোনো শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করানো বাধ্যতামূলক। তবে সময়মতো নিবন্ধন না হলে, দেরী হলেও যত দ্রুত সম্ভব জন্ম নিবন্ধন করা উচিৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে এখন অনলাইনে নিজেই জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যায়, যা ইউনিয়ন বা পৌরসভা অফিসে গিয়ে আবেদন করার তুলনায় অনেক দ্রুত ও নিরাপদ।
🎯 বিষয়বস্তুর সারাংশ
- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার গুরুত্ব
- আবেদন করার সুবিধা ও খরচ
- কি কি ডকুমেন্ট লাগবে
- ধাপে ধাপে আবেদন পদ্ধতি
- বিদেশ থেকে আবেদন প্রক্রিয়া
- ফি পেমেন্ট ও স্ট্যাটাস যাচাই
- Frequently Asked Questions (FAQs)
📌 কেন অনলাইনে আবেদন করবেন?
- সময় ও খরচ সাশ্রয় – অনলাইনে আবেদন ও ই-ফি দিয়ে ইউনিয়ন অফিসে অপেক্ষা না করে দ্রুত সনদ পাওয়া যায়।
- সুবিধাজনক – মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়েই আবেদন করতে পারবেন।
- স্বচ্ছতা – অনলাইনে ফি কম (৫০ টাকা বা তার কম), ইউনিয়নে মাঝে মাঝে বাড়তি ফি নেয়।
📋 আবেদনের খরচ (জন্ম নিবন্ধনের ফি)
বয়স | বাংলাদেশ (ফি) | বিদেশ (ফি, দূতাবাস) |
০–৪৫ দিন | ফ্রি | ফ্রি |
৪৬ দিন–৫ বছর | ২৫ টাকা | ১ USD |
৫+ বছর | ৫০ টাকা | ১ USD |
🔹 নোট: ইউনিয়ন বা পৌরসভা থেকে অতিরিক্ত ফি সংগ্রহ হতে পারে।
🗂️ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
০–৪৫ দিনের শিশুর জন্য:
- EPI টিকা কার্ড বা হাসপাতালের প্রত্যয়ন
- ট্যাক্স পেমেন্ট রশিদ
- পিতা-মাতার ডিজিটাল জন্ম সনদ
- মোবাইল নাম্বার (OTP এর জন্য)
৪৬ দিন–৫ বছরের জন্য:
- EPI কার্ড/হাসপাতাল সার্টিফিকেট
- ট্যাক্স রশিদ
- পিতা-মাতার ডিজিটাল সনদ
- (যদি সন্তানের স্কুলে থাকে) প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র
- মোবাইল নাম্বার
৫+ বছরের জন্য:
- এমবিবিএস ডাক্তারের বয়স প্রত্যয়ন
- (ঐচ্ছিক) JSC/SSC সার্টিফিকেট
- পিতা-মাতার ডিজিটাল সনদ
- ট্যাক্স রশিদ ও মোবাইল নাম্বার
🔹 মোটামুটি: সব বয়সের জন্য পিতা—মাতার ডিজিটাল জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক।
🌐 অনলাইনে আবেদন করার ধাপগুলি
Step ১: ওয়েবসাইটে যান
ভিজিট করুন 👉 bdris.gov.bd/br/application
Step ২: ঠিকানা নির্বাচন
‘জন্মস্থান’, ‘স্থায়ী ঠিকানা’, অথবা ‘বিদেশে দূতাবাস’ থেকে যেকোনো একটি ঠিকানা সিলেক্ট করুন।
Step ৩: নিবন্ধনকারীর তথ্য
- নাম (বাংলা ও ইংরেজি)
- জন্ম তারিখ
- পিতামাতার তথ্য (নাম, জন্ম সনদ নম্বর, জাতীয়তা)
- লিঙ্গ, জন্মে সন্তান সংখ্যা ইত্যাদি
Step ৪: ঠিকানা পছন্দ আর তথ্য দেওয়া
দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন/ওয়ার্ড—ধাপে ধাপে ঠিকানা পূরণ করুন।
Step ৫: আবেদনকারীর তথ্য পূরণ
– শিশু/নিবন্ধনকারী এবং আবেদনকারী (যদি অভিভাবক না হয়) উভয়ের তথ্য পূরণ করুন।
Step ৬: ডকুমেন্ট আপলোড
EPI কার্ড, স্কুল প্রত্যয়ন, ভ্যাক্সিন কার্ড ইত্যাদি স্ক্যান করে আপলোড করুন।
Step ৭: ফর্ম রিভিউ
সব তথ্য সঠিক কিনা দেখে নিন—ভুল থাকলে ঠিক করে দিন।
Step ৮: OTP ভেরিফিকেশন
ইমেইল ও মোবাইল নম্বর দিন → ওটিপি পাঠানোর পর আগের ঘরে ঠিকভাবে দিন → “Submit” ক্লিক করুন।
Step ৯: আবেদনপত্র প্রিন্ট
সাবমিশনের পর পাবেন Application ID ও প্রিন্ট অপশন। PDF/Print করে ইউনিয়ন/পৌরসভায় জমা দিন।
Step ১০: ওটিপি ভেরিফাই ও আবেদন সাবমিট করুন
আবেদন রিভিউ পেজের নিচের দিকে গেলে ওটিপি যাচাই করার অপশন পাবেন। এখানে সর্বপ্রথম আবেদনকারীর একটি ইমেইল ঠিকানা লিখুন। তারপর একটি সচল ফোন নাম্বার লিখে ‘ওটিপি পাঠান’ লেখাতে ক্লিক করুন। আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে ৬ ডিজিটের যেই ওটিপি কোড যাবে, সেটি পাশের ঘরে লিখে সাবমিট করুন। জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদনের ওটিপি ভেরিফিকেশন
Step ১১: জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কপি প্রিন্ট করুন
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের সকল ধাপ সম্পন্ন করে সাবমিট করার পর, একটি কনফার্মেশন পেজ আসবে। এখানে আপনার আবেদনপত্র নম্বর বা অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেখতে পাবেন। এখানে ‘ফ্রি প্রদান করুন’ লেখাতে ক্লিক করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফি দিতে পারবেন।
💳 ফি পেমেন্ট ও চালানি
- eservices.bdris.gov.bd সাইটে যান
- আবেদনটি সিলেক্ট করে ফি (২৫/৫০ টাক বা USD 1) পেমেন্ট করুন
- চালানের PDF প্রিন্ট করে জমা দিন ইউনিয়ন/পৌরসভায়
- আবেদন যাচাই শেষে ইউনিয়ন থেকে Birth Certificate ইস্যু করা হবে
🌍 বিদেশ থেকে আবেদন
প্রবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ নেই – দূতাবাসের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন।
- দেশের ওয়েবসাইটে ‘Apply from abroad’ অপশন সিলেক্ট করুন
- একই আবেদন ফরম পূরণ করুন
- প্রমাণপত্র ও পিতা/ মাতার NID ও জন্ম সনদ যোগ করুন
- ফি: শিশুর বয়স অনুযায়ী USD 1 বা ফ্রি (০–৪৫ দিনের জন্য)
🔎 আবেদন স্ট্যাটাস কীভাবে চেক করবেন?
- যান 👉 bdris.gov.bd/br/application/status
- Application ID, জন্ম তারিখ এবং জন্ম নিবন্ধনের ধরন দিয়ে সার্চ করুন
- আবেদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি/অবস্থা সর্বশেষ জানতে পারেন
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
Q1: নতুন জন্ম নিবন্ধনে কত সময় লাগবে?
- অনলাইনে আবেদন → সাধারণত ৩–৭ কার্যদিবসে সনদ ইস্যু হয়। তবে অনেক এলাকায় ৭ কার্যদিবস সময় লাগে।
Q2: আবেদন বাতিল হবে কেমন করে?
- ১৫ দিনের মধ্যে ইউনিয়নের ডকুমেন্ট না জমালে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়।
Q3: টিকা কার্ড না থাকলে কী উপায়?
- EPI না থাকলে হাসপাতালের বা রেজিস্টার্ড স্বাস্থ্যকর্মীর স্বাক্ষরযুক্ত ডকুমেন্ট গৃহীত হয়।
✅ উপসংহার
বাংলাদেশে নতুন জন্ম নিবন্ধন এখন অনলাইনে করা খুবই সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ। স্বল্প ফি ও কম ঝামেলা—সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিন্তে করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সময় বাঁচান ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন—এতে হয়ে যাবে সুরক্ষিত নগরীর নাগরিক।