বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অপরিহার্য। আপনি যদি অন্তত ১৬ বছর বয়সী হন, তাহলে আপনি এখন সহজেই নতুন আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ আবেদন করা যায় সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে কিংবা অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
বর্তমানে নতুন ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল হওয়ায় আপনি ঘরে বসেই অনলাইন পদ্ধতিতে NID-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালে নতুন এনআইডি কার্ড করার ধাপে ধাপে নিয়ম।
আলোচনার বিষয়বস্তু
- নতুন আইডি কার্ড করার ধাপসমূহ
- অনলাইনে NID Card করার পদ্ধতি
- আবেদনকারীর যোগ্যতা
- দরকারি কাগজপত্র
- অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধনের ধাপ
- উপজেলা অফিসে বায়োমেট্রিক প্রদান
- এনআইডি কার্ড পাওয়ার সময়কাল
- NID সংগ্রহ পদ্ধতি
- প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার প্রক্রিয়া
প্রথমে nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন” অপশনে যান। সেখান থেকে একাউন্ট তৈরি করে, প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্যাদি পূরণ করে অনলাইনে আবেদনটি সম্পন্ন করতে হবে।
পরে আবেদন ফরমটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর আপনার বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের স্ক্যান) গ্রহণ করা হবে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার NID কার্ড প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং অনলাইন কপি ডাউনলোডের সুযোগ পাবেন।
অনলাইনে NID কার্ড আবেদন করার দুইটি উপায়
১. অনলাইনে – nidw.gov.bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করে
২. সরাসরি – উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে
নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্যতা
নিচের শর্তগুলো পূরণ করলে আপনি নতুন ভোটার হতে পারবেন –
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
- বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর হতে হবে
- পূর্বে কখনও NID-এর জন্য আবেদন না করে থাকলে
নতুন এনআইডি কার্ড করতে যেসব ডকুমেন্ট লাগবে
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (অনলাইন)
- আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি
- বাবা-মা বা স্বামী/স্ত্রীর NID কপি
- নাগরিকত্ব সনদ বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)
- ইউটিলিটি বিল/হোল্ডিং ট্যাক্স কপি
- রক্তের গ্রুপ রিপোর্ট
- সচল মোবাইল নম্বর
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের স্বীকৃতি/প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র
অনলাইনে NID কার্ড করার ধাপসমূহ
ধাপ ১: ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন
- nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
- “নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন” অপশনে ক্লিক করুন
- আপনার নাম, জন্ম তারিখ এবং ভেরিফিকেশন কোড পূরণ করে ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন
- একটি সচল মোবাইল নম্বর দিয়ে ওটিপি কোড দিয়ে ভেরিফাই করুন
- ইউনিক ইউজারনেম ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন
ধাপ ২: প্রোফাইল সম্পাদনা করুন
অ্যাকাউন্ট তৈরি শেষে লগইন করে প্রোফাইল সেকশনে গিয়ে ব্যক্তিগত, ঠিকানা, ও অন্যান্য তথ্য আপডেট করুন।
ধাপ ৩: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
আপনার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, পিতা-মাতার নাম ও পরিচয়, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
ধাপ ৪: অন্যান্য তথ্য প্রদান
শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা (যদি থাকে), পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, টেলিফোন নম্বর ইত্যাদি দিন।
ধাপ ৫: ঠিকানার তথ্য
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সহ ভোটার হওয়ার এলাকার তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। সঠিক এলাকায় ভোটার হওয়ার জন্য “এই ঠিকানায় ভোটার” অপশনে টিক দিন।
ধাপ ৬: কাগজপত্র সংযুক্তি
অনলাইনে সাধারণত ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
ধাপ ৭: আবেদন সাবমিট
সব তথ্য যাচাই করে ‘সাবমিট’ করুন। চাইলে ‘পেছনে’ গিয়ে তথ্য এডিট করতে পারবেন।
ধাপ ৮: আবেদন ফরম প্রিন্ট
সাবমিটের পর ফরমের একটি কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন।
ধাপ ৯: উপজেলা অফিসে বায়োমেট্রিক
আবেদনের পর উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও চোখের রেটিনা স্ক্যান সম্পন্ন করুন।
ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন সময় লাগে?
সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার ১০-১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কার্ড প্রস্তুত হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন কপি ডাউনলোড করা যায়।
ভোটার আইডি কার্ড কিভাবে সংগ্রহ করবেন?
একবার আবেদন অনুমোদিত হলে, আপনি আপনার অনলাইন ড্যাশবোর্ড থেকে এনআইডি কার্ডের ডিজিটাল কপি পেতে পারেন। প্রিন্টেড কপি পেতে হলে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
শেষকথা
২০২৫ সালে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করা আগের চেয়ে অনেক সহজ ও স্বচ্ছ হয়েছে। আপনি চাইলে বাসা থেকেই অনলাইনে আবেদন করে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারেন। সঠিক তথ্য এবং ডকুমেন্ট দিলে সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে যাবেন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
১. ১৬ বছর বয়সে কি এনআইডি করা যায়?
হ্যাঁ, তবে প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র নিবন্ধন করা যাবে, ১৮ বছরে পূর্ণ ভোটার হওয়া যাবে।
২. নতুন এনআইডি অনলাইন থেকে কবে পাওয়া যাবে?
আবেদনের পর বায়োমেট্রিক সম্পন্ন হলে ১০-১৫ কার্যদিবসের মধ্যে।
৩. জন্ম নিবন্ধন না থাকলে আবেদন করা যাবে?
না, এটি বাধ্যতামূলক ডকুমেন্ট।
৪. বিদেশে থাকলে কিভাবে করব?
বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে।